সাতক্ষীরার সংবাদ

কালিগঞ্জে গাছি ও কৃষককূল হেমন্তে শীতের ছোঁয়া, ফসল ও খেজুর রস সংগ্রহের প্রস্তুতি নিচ্ছে

  শেখ আতিকুর রহমান, বার্তা সম্পাদক ২৯ অক্টোবর ২০২২ , ১০:৫৫:১৩ প্রিন্ট সংস্করণ

বিজয় নিউজ ডেস্ক : সবুজ ঘাসের উপর শিশিরে ভেজা শেফালী ফুলের বরণডালাটি সাদা শাড়ি লাল পেড়ে এলো চুলের কঙ্কন পরা পল্লী বালার হস্তে অর্পণ করে ঋতু রানী শরৎ সাদা মেঘের ভেলায় চেপে বিদায়ের বেলা কানে কানে বলে গেল এবার নবান্ন উৎসবে মেতে ওঠো সবাই, বরণ করে নাও হেমন্তকে। ষড় ঋতুর পরিক্রমায় এবার সেই বরণ ডালায় হেমন্তকে বরণ করে নিয়েছে প্রকৃতি। প্রকৃতির অপরূপ রূপ লবণের চক্র বুহ্যে বেষ্টিত আমাদের এই প্রিয় বাংলাদেশ। এখানে ছয়টি ঋতুর এক এক ঋতুর রয়েছে এক এক বৈশিষ্ট্য। হেমন্তে, কৃষকের মুখে হাসি, আর মাত্র কয়েক দিন পর সোনার ফসলে ভরে যাবে তার আঙ্গিনা। শুরু হবে নবান্ন উৎসব, কৃষাণীরা ব্যস্ত আঙিনা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নের কাজে। কয়েক বছর আগে পর্যন্ত মাঠ থেকে ফসল বাড়ি এনে গরু দ্বারা তা মাড়াই করে গোলায় উঠাতেন কৃষক। ঢেঁকিতে সেটে চাল তৈরি করতেন গ্রামের মা-বোনেরা। যুগের বিবর্তনে এখন অবশ্য মাড়াই এবং চাউল তৈরি সবই হচ্ছে মেশিনের মাধ্যমে। ফলে শ্রম এবং সময় কম ব্যয় হচ্ছে।ঋতু বৈচিত্রে এখন রাতের শেষে কুয়াশা জানান দিচ্ছে শীতের আগমন বার্তা। পুবালি বাতাসে অপরুপ সৌন্দর্যে সকলের মন মাতিয়ে তুলছে নতুন ধানের ঘ্রাণ। এবার কিছুটা আগেই সকালের শিশিরের সাথে অনুভূত হচ্ছে মৃদু শীত।আবহমান কাল হতে গ্রাম- বাংলার ঐতিহ্য খেজুর রস সংগ্রহের জন্য উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের গাছিরা খেজুর গাছ কাটার কাজে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন।আর মাত্র কয়েক দিন পর রস সংগ্রহ করে রস থেকে গুড় তৈরির পর্ব শুরু হয়ে, চলবে প্রায় ফাল্গুন মাস পর্যন্ত। খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের প্রস্তুতি প্রতিটি গ্রামে চোখে পড়ছে। উপজেলার গ্রামাঞ্চল খেজুর রস ও গুড়ের জন্য এক সময় খ্যাতি ছিল। সময়ের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম বাংলার প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী খেজুরের গুড়। কিছু দিন আগেও বিভিন্ন এলাকার অধিকাংশ বাড়িতে, ক্ষেতের আইলে, ঝোপ-ঝাড়ের পাশে ও রাস্তার দুই ধার দিয়ে ছিল অসংখ্য খেজুর গাছ। কোন পরিচর্যা ছাড়াই অনেকটা প্রাকৃৃতিক ভাবে বেড়ে উঠতো এসব খেজুর গাছ। প্রতিটি পরিবারের চাহিদা পূরণ করে অতিরিক্ত রস দিয়ে তৈরি করা হতো সুস্বাদু খেজুরের গুড়। এখনও শীতকালে শহর থেকে মানুষ দলে দলে ছুটে আসে গ্রাম বাংলার খেজুর রস খেতে। এক সময় সন্ধ্যাকালীন সময়ে গ্রামীন পরিবেশটা খেজুর রসে মধুর হয়ে উঠতো। রস আহরণকারী গাছিদের প্রাণচাঞ্চল্য লক্ষ্য করা যেত সে সময়ে। রস জ্বালিয়ে পাতলা ঝোলা, দানা গুড় ও পাটালী তৈরি করতেন। যার সাধ ও ঘ্রাণ ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখন অবশ্যই সে কথা নতুন প্রজন্মের কাছে রূপকথা মনে হলেও বাস্তব, শীত যত বেশি পড়বে তত বেশি মিষ্টি রস দেবে খেজুর গাছ। এ গাছ ১০ থেকে ১২ বছর পর্যন্ত রস দেয়। শীতের পুরো মৌসুমে চলে রস, গুড়, পিঠা, পুলি ও পায়েস খাওয়ার পালা। এছাড়া খেজুরর পাতা দিয়ে আর্কষনীয় ও মজবুত পাটি তৈরী হয়। এমনকি জ্বালানি কাজেও ব্যাপক ব্যবহার হয়। গ্রামীন জনপদে সাধারণ মানুষের সচেতনতার অভাবে পুকুরের পাড়ে রাস্তার ধারে পরিবেশ বান্ধব খেজুর গাছ এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। ইট ভাটার রাহু গ্রাসে, জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার, জলবায়ু পরিবর্তন, কালের বির্বতনসহ বন বিভাগের নজরদারী না থাকায় বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেজুর গাছ এখন বিলুপ্তির পথে। এভাবে বিলুপ্ত হতে থাকলে আগামী প্রজন্মকে পাঠ্য বইয়ে খেজুর গাছের গল্প পড়ে খেজুর গাছ এবং খেজুরের রস সম্পর্কে ধারণা নিতে হবে।

আরও খবর

Sponsered content